ক্যাম্পাস

ঢাবিতে নিষিদ্ধ শিক্ষক চবির পরীক্ষা কমিটিতে

মিডিয়া এক্সপ্রেস
প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ২০২৩ সেপ্টেম্বর ১২, ১১:৫৩ পূর্বাহ্ন
#
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দীন। ছবি : সংগ্রহীত

পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজে অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা সংক্রান্ত সব কার্যক্রম থেকে তিন বছরের জন্য নিষিদ্ধ হওয়া এক শিক্ষককে নিজস্ব পরীক্ষা কমিটিতে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ।

ওই শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন। গত বছরের ১৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কর্তৃক ৩ বছরের জন্য পরীক্ষা সংক্রান্ত বিভাগীয় সকল কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ হন তিনি।


গত ৭ সেপ্টেম্বর চবির ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সভাপতি আছমা আক্তার স্বাক্ষরিত তৃতীয় বর্ষ বি. এ. অনার্স পরীক্ষা ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষা কমিটি গঠন প্রসঙ্গের চিঠিটি ইতোমধ্যেই কালবেলার হাতে এসে পৌঁছেছ৷

সেখানে উল্লেখ করা হয়, বিভাগের ৪ সেপ্টেম্বর ৬০তম একাডেমিক কমিটির ৪(গ) এর আলোচ্য বিষয় ও সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিভাগের ৩য় বর্ষ বি. এ. (সম্মান) পরীক্ষা ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষা কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুল করিমকে। অভ্যন্তরীণ সদস্য করা হয়েছে বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবুল হাসেম ও সহকারী অধ্যাপক আলতাফ হোসেনকে। বহিরাগত সদস্য করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজ বিভাগের পরীক্ষা সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ সেখানকার ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিনকে।

বিভাগের সভাপতি আছমা আক্তার বলেন, পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ড. আব্দুল করিম একাডেমিক কমিটিতে সদস্য হিসেবে ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন এর নাম প্রস্তাব করেন। বিভাগের পাচঁজন শিক্ষকের মধ্যে দুজন সবসময় ড. আবদুল করিমের পক্ষে। রেজুলেশন খাতাও তার দখলেই থাকে সবসময়। ওনাদের সাথে আমার পেরে ওঠা সম্ভব হয় না। অসংখ্য দুর্নীতির প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও আমার প্রতিবাদ-প্রতিরোধ কোনো কাজে দেয় না।

তিনি আরও বলেন, তাদের বিরুদ্ধে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েও কোনো লাভ হয় না। তাদের কাজে বাঁধা দিয়ে কখনোই আমি সফল হইনি। তারা তাদের ইচ্ছেমতো সবকিছু করিয়ে নেয়। একজন নারী হিসেবে আমার প্রতি তারা মিনিমাম ভদ্রতা বজায় রাখেন না। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। আমাকে যেকোন মূল্যে চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে দেওয়ার একটা পরোক্ষ হুমকি দিয়ে থাকেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ড. আব্দুল করিম বলেন, বিভাগের সভাপতি আছমা আক্তার এর সাথে আমরা কোন অসদ্বাচারণ করি নি। তা ছাড়া, বাহাউদ্দীন স্যারের বিষয়টা আমরা জানতাম না। জানলে তাকে পরীক্ষা কমিটিতে রাখতাম না। এখন যেহেতু জেনেছি। এ বিষয়ে আমরা নতুন করে সিদ্ধান্ত নিব। তবে, বিভাগের সভাপতি আমাদেরকে এ বিষয়ে অফিসিয়ালি কোনকিছুই বলেননি। তিনি এই কাজটা পরিকল্পিতভাবে করেছেন।

২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল ঢাবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ঢাবির ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের এই অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিনের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের প্রমাণ হওয়ায় পরীক্ষা সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম থেকে ৩ বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে ২০১৭ সনের ৩য় বর্ষ ৬ষ্ঠ সেমিস্টার বি. এ. সম্মান পরীক্ষায় ফলাফলকে ব্যাপক ব্যবধান রেখে চূড়ান্ত করার আনিত অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় শৃঙ্খলা পরিষদের (২৯/০১/২০১৯) সুপারিশ ও সিন্ডিকেটের (৩০/০১/২০২২) সিদ্ধান্ত অনুযায়ি আপনাকে ৩ (তিন) বছরের জন্য পরীক্ষা সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার হইল। উক্ত পরীক্ষার ১ম ও ২য় বার টেবুলেশন সংক্রান্ত সকল বিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোষাগারে ফেরত দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হইল।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মোহাম্মদ বাহাউদ্দীনকে তিন বছরের জন্য পরীক্ষা সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ করে ঢাবি সিন্ডিকেট। তার নিষেধাজ্ঞা চলমান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাবির ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন বলেন, প্রথমত এ বিষয়ে আমার কাছে কোন চিঠি আসেনি। আমাকে পরীক্ষা কমিটিতে রাখার জন্য আমি কাউকে বলিনি। তা ছাড়া, ঢাবিতে আমাদের যে ঘটনাটা ঘটেছে, সেটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টার্নাল বিষয়। আমাদের বিভাগ সংক্রান্ত। এটা বাহিরের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রযোজ্য নয়৷ আমি গত ১৫ দিন আগেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করে আসছি।

চবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল হক বলেন, যে তার নিজস্ব বিশ্ববিদ্যালয়ে শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েছে, শাস্তি শেষ না হওয়া পর্যন্ত সে অন্য কোথাও একই বিষয়ে যুক্ত থাকতে পারবে না। এটা আইনের চরম লঙ্ঘন এবং নীতিনৈতিকতা বিবর্জিত। এখানে কারো অসৎ উদ্দেশ থাকতে পারে।

চবির ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক চৌধুরী আমীর মোহাম্মদ মুছা বলেন, এগুলো যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্ব বিভাগের। এরকম শাস্তিপ্রাপ্ত কোনো শিক্ষককে পরীক্ষা কমিটিতে সাধারণত রাখা হয় না। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রমাণসহ লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নিব।

এ বিষয়ে জানতে চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার এর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনের ব্যক্তিগত নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি সাড়া দেননি।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video