‘‘দুটি জিনিস অসীম: মহাবিশ্ব এবং মানুষের অজ্ঞতা; এবং আমি প্রথমটার ব্যাপারে নিশ্চিত নই।’’ আলবার্ট আইনস্টাইন
বিশ্বব্যাপী আলোচনা যখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে, ঠিক তখন পশ্চিমা বিশ্বের একদল প্রযুক্তিশিল্প নেতা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, মানুষ এখন যে AI (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) প্রযুক্তি তৈরি করছে তা একদিন বিশ্বমানবতার জন্য অস্তিত্বের হুমকি হয়ে উঠতে পারে। তারা আরও বলেছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে সর্বগ্রাসী মহামারি বা পারমাণবিক যুদ্ধের সমান সামাজিক ঝুঁকি হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।
এআই একটি মানবসৃষ্ট দক্ষতা, যেখানে এমন ধরনের মেশিনে বুদ্ধিমত্তা স্থাপন করা হয় যা মানুষের মতোই চিন্তা করে। এটি মানুষের নির্দেশনা ছাড়াই বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম।
মানুষ হিসেবে আমরা আবেগপ্রবণ প্রাণী। এই আবেগ আমাদের বন্ধু এবং জীবনসঙ্গী বেছে নিতে, তাদের সঙ্গে থাকতে এবং সুখ ও দুঃখকে ভাগ করে নিতে প্রভাবিত করে। ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স এমন একটি আবিষ্কার, যা মানুষের আবেগ বা অনুভূতির শক্তিকে আবদ্ধ করে এবং সেই অনুযায়ী যন্ত্রকে পরিচালনা করে।
‘এআই’ এর নিজস্ব কোনো আবেগ থাকতে পারে না বলে সম্মত হয়েছেন গবেষকরা। তবে এটি আবেগ অনুকরণ করতে পারে। এআই সম্পর্কে কথা বলার সময় আমাদের মনে যে বিষয়গুলো আসে তা হলো মেশিন লার্নিং, রোবোটিকস এবং নেটওয়ার্ক।
ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স যেখানে মানুষের সম্পর্ক এবং মিথস্ক্রিয়াগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত, সেখানে এআই বড় বড় ডেটা প্রক্রিয়াকরণ এবং বিশ্লেষণের ওপর বেশি দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।
যদিও মেশিনগুলো তার নির্দেশিত যে কোনো প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে এবং নিখুঁতভাবে কাজগুলো সম্পাদন করতে পারে, তবে মেশিনের মধ্যে কোনো ধরনের মানসিক গুণাবলি নেই। চেতনা এবং মানসিক গুণাবলি মানুষকে দয়ালু ও মানবিক করে তোলে।
এর পাশাপাশি, বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ প্রশাসনকেও উদ্বিগ্ন করেছে। নৈতিক ব্যবস্থা প্রয়োগ করা কার দায়িত্ব এবং কীভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলেও প্রশ্ন করেছেন তারা। কিছু গবেষণায় যুক্তি দেখানো হয়েছে ভূরাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতাই এআই বিকাশের জন্য প্রধান চালক। আর এখানে নৈতিক উদ্বেগগুলো আড়ালে চলে যায়।
কিছু স্কলার বিশ্বাস করেন, এআই এর নেতিবাচক প্রভাবের মধ্যে রয়েছে বেকারত্ব, পক্ষপাতিত্ব এবং গোপনীয়তা ভঙ্গের মতো বিষয়।
আইএমএফএর গবেষকরা বলছেন, বড় ডেটা প্রক্রিয়াকরণ এবং নেটওয়ার্কগুলো এআইএর মাধ্যমে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় বিপ্লব ঘটাবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এটি উন্নয়নশীল অর্থনীতিতেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। এটি ধনী ও দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে ব্যবধানকে বাড়িয়ে দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে। মানুষের নিয়ন্ত্রণ এবং ম্যানিপুলেশনের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে এআই।
যদিও বিশ্ব হাজার হাজার মানবসৃষ্ট সমস্যার ভারে জর্জিত, তবুও বিশ্বের মোট জনসংখ্যার তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি এখনও একটি শালীন জীবনের জন্য সংগ্রাম করছে। এআইএর পৃষ্ঠপোষক এলন মাস্ক ঠিকই বলেছেন, ‘আমরা যা করছি তার কোনো প্রয়োজনই ছিল না।’ সুপার-বুদ্ধিমত্তাকে দ্বিধারী তলোয়ার হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তিনি।
মাস্ক আরও বলেছেন, বিশ্বকে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থেকে সুফল শুধু সচ্ছল ব্যক্তিরাই পাবে না বরং সমাজের সব স্তরের মানুষ এর দ্বারা উপকৃত হবে।
ডা. রুবায়ুল মোরশেদ: চিকিৎসক, গবেষক, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ও প্রতিষ্ঠাতা, সম্মান ফাউন্ডেশন
►নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। সাপ্তাহিক মিডিয়া এক্সপ্রেস এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, সাপ্তাহিক মিডিয়া এক্সপ্রেস কর্তৃপক্ষের নয়।