চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) কর্মরত সাংবাদিক মোশাররফ শাহকে মারধর করেছে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের অনুসারীরা। আহত অবস্থায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চবি নতুন কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের সামনে তাকে মারধর করা হয়। মারধরের পর ছাত্রলীগের অনুসারীরা ‘আর নিউজ করিস, তারপর দেখব’ বলে হুমকি দেয় ওই সাংবাদিককে।
মোশাররফ শাহ চবির যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। এছাড়া তিনি চবি সাংবাদিক সমিতির সদস্য ও প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।
মোশাররফ শাহ বলেন, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আমি উপাচার্যের কার্যালয়ে যাচ্ছিলাম ছাত্রলীগের সংঘর্ষ, ভাঙচুর, প্রধান প্রকৌশলীকে মারধরসহ সার্বিক বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য। এসময় নতুন কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের সামনে ১৫ থেকে ২০ জন ছাত্রলীগের কর্মী আমাকে প্রথমে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এরপর ছাত্রলীগ নিয়ে কেন প্রতিবেদন করেছি, তা জানতে চায়। কয়েকজন আমার কপালে, মুখে কিল-ঘুষি দেয়, বুকে লাথি দেয় এবং হাতেও আঘাত করে। মারধরের সময় তারা আমাকে পরবর্তীতে ছাত্রলীগ নিয়ে আর কোনও প্রতিবেদন না ছাপানোর হুমকি দেয়। তারা বলেছে, ‘আর নিউজ করিস, তারপর দেখব তোরে কে বাঁচাতে আসে। ছাত্রলীগকে নিয়ে কোনও নিউজ হবে না’।
বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ডা. মো. আবু তৈয়ব বলেন, মোশাররফকে কিল ঘুষি এবং রড দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। হাতে এবং মাথায় আঘাত পেয়েছে সে। কপালে চারটি সেলাই দিতে হয়েছে। তার হাতে ফ্র্যাকচার হওয়ার হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই এক্সরে ও উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
তবে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, এ ঘটনায় আমার কোনো অনুসারী জড়িত নয়। যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব আমরা। আমি খোঁজ নিচ্ছি।
চবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মাহবুব এ রহমান বলেন, এর আগেও বারবার সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু প্রশাসন কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। যার ফলশ্রুতিতে আবারও এমন ঘটনা ঘটানোর দুঃসাহস দেখিয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার ও দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।
চবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমাম ইমু বলেন, ভুক্তভোগী সাংবাদিককে শহরে পাঠানো হয়েছে। সাংবাদিকদের মারধরের ঘটনা এটাই প্রথম নয়৷ প্রশাসন কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে৷ দোষীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার ও গ্রেফতারের দাবি জানাই। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রশাসন এর ব্যবস্থা না নিলে বৃহত্তর কর্মসূচিতে যাবে চবিসাস।
প্রক্টর ড. মোহাম্মদ নুরুল আজিম সিকদার বলেন, আমরা বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে মেডিক্যালে গিয়ে তাকে দেখে এসেছি। তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।