পাকিস্তানকে পাকিস্তানেরই মাটিতে হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ

খেলা ডেস্ক
প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ২০২৪ সেপ্টেম্বর ০৩, ০৩:৪৩ অপরাহ্ন

এ এমন এক সিরিজ, যার আগে বাংলাদেশকে খুব বেশি মানুষ হিসেবে ধরেনি। এ এমন এক সিরিজ, যার আগে পাকিস্তানেরই সাবেক ক্রিকেটার বাসিত আলী বলেছিলেন, শুধু বৃষ্টিই পারে বাংলাদেশকে বাঁচাতে, না হলে এই সিরিজে প্রতিদ্বন্দ্বীতারই সম্ভাবনা তেমন নেই।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ এমন এক সিরিজই হয়ে থাকল, যেখানে বাংলাদেশ ইতিহাস গড়েছে। টেস্টে বাংলাদেশের ২৪ বছরের পথচলায় এর চেয়ে দাপুটে সিরিজ যে আর কাটেনি! মাহাত্ম্যের বিচারে এর চেয়ে সফল সিরিজও কি আর আছে?

পাকিস্তান মাটিতে, পাকিস্তানেরই প্রথম সারির দলকে, দুই টেস্টেই দাপট দেখিয়ে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করে দিল বাংলাদেশ! রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম টেস্টে ১০ উইকেটে জিতে টেস্টে পাকিস্তানকে প্রথমবার হারানোর স্বাদ পেয়েছিল বাংলাদেশ, একই ভেন্যুতে দ্বিতীয় টেস্টে আজ বাংলাদেশ জিতে গেল ৬ উইকেটে।

১৪৩ রান দরকার, হাতে ১০ উইকেট। ক্রিকেটে অনিশ্চয়তার জায়গা তো সব সময়ই থাকে, তবু রাওয়ালপিন্ডিতে আজ টেস্টের পঞ্চম দিনে সম্ভাবনায় যে বাংলাদেশই বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে ছিল, সেটা বুঝতে ক্রিকেট বিশ্লেষক হতে হয় না।

পাকিস্তান অবিশ্বাস্য কিছুর আশায় ছিল। বৃষ্টির চোখরাঙানিও ছিল। তবে বৃষ্টি শেষ পর্যন্ত আর বাংলাদেশের জয়ের পথটা পিচ্ছিল করতে আসেনি। পাকিস্তানেরও সাধ্যে কুলায়নি বল হাতে অবিশ্বাস্য কিছু করার।

দিনের শুরুতে একটু অস্বস্তি ছিল বটে বাংলাদেশের। ৭ ওভারে বিনা উইকেটে ৪২ রান নিয়ে দিন শুরু করেছিল বাংলাদেশ, জাকির হাসান-সাদমান ইসলামের জুটি ২০ মাসের মধ্যে প্রথমবার টেস্টে ওপেনিং জুটিতে ফিফটির স্বাদ দিয়েছে বাংলাদেশকে। তবে এরপর ওভার ছয়েকের মধ্যে ১৩ রানেই দুই ওপেনার বিদায় নিলেন। জাকির আউট ৩৯ বলে ৪০ রান করে, সাদমান ৫১ বলে ২৪ রানে।

দিনের প্রথম ঘণ্টা তো সব সময়ই কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। তার মধ্যে পাকিস্তানের তিন পেসার মীর হামজা, মোহাম্মদ আলী আর খুররম শেহজাদ দিনের শুরু থেকেই দারুণ লাইন-লেংথে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের রান করার সুযোগ সেভাবে দেননি। দিনে লক্ষ্য মাত্র ১৪৩ রান হওয়ায় রান শুকানো তেমন বড় ব্যাপার ছিল না, কিন্তু শুরুর ১১ ওভারের মধ্যে দুই উইকেট চলে যাওয়ায় একটা চাপা অস্বস্তি তো ছিলই!

কিন্তু তৃতীয় উইকেটে মুমিনুল হক আর নাজমুল হোসেন শান্ত অস্বস্তিটা দূর করে বাংলাদেশের জয়ের রাস্তা সহজ করে দিলেন। উইকেটের ঘরে সংখ্যাটা ২ রেখেই দুজন প্রথমে ১০০-র ঘরে নিলেন বাংলাদেশকে, লাঞ্চে যাওয়ার সময় বাংলাদেশের সামনে সমীকরণটা আর মাত্র ৬৩ রানের। হাতে তখন ৮ উইকেট, চিন্তার আর তখন কিছু ছিল কি?

লাঞ্চের পর অবশ্য ৫৭ রানের জুটিটা ভাঙে শান্ত (৩৮) আগা সালমানের বলে আউট হয়ে যাওয়ায়। মুশফিকের সঙ্গে আবার জুটি গড়েন মুমিনুল। এ জুটিতে রান তেমন আসেনি, তবে ২৬ রানের ওই জুটিতে বাংলাদেশের রান ১৫০ পেরিয়ে গেল। জয় তখন দৃষ্টিসীমায়, আরও কাছে।

উইকেটের জন্য মরিয়া পাকিস্তান ওই জুটির সময়ে টানা দুই বলে দুটি রিভিউও হারাল। শেষ পর্যন্ত যখন উইকেট পেল পাকিস্তান, ৭১ বলে ৩৪ রান করে যখন মুমিনুল আউট হচ্ছেন, তখন আর জয়ের জন্য বাংলাদেশের দরকার ৩২ রান। ডাকছে ইতিহাস!

সাকিব এলেন, মুশফিকের সঙ্গে জুটি বাঁধলেন। তখন একটাই সংশয় ছিল, বাংলাদেশ জেতার আগে আবার চা বিরতির ছেদ পড়ে কি না। শেষ পর্যন্ত তা আর হলো না। একবার স্টাম্পিংয়ের শঙ্কায় পড়া সাকিবের চারেই জয় নিশ্চিত হয়ে গেল। সাকিব ২১ রানে অপরাজিত থাকলেন, মুশফিক ২১ রানে। বাংলাদেশ গড়ে ফেলল ইতিহাস।

চা-টা আজ আরও মিষ্টিই লাগার কথা সাকিব-মুশফিক-শান্তদের। চিনি হয়ে যে চায়ে মিশে গেল ইতিহাস! 


প্রকাশক কর্তৃক ৫৫/১ পুরানা পল্টন(৮ম তলা), ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং ১৬২/১ আরামবাগ গ্যালাক্সি প্রিন্টার্স থেকে মুদ্রিত।

Mobile : +88 01316 39 51 50 (News), +88 01816 19 58 12 (Ads)
E-mail : info.mediaexpressbd@gmail.com, info@mediaexpressbd.com

কপিরাইট © 2011-2023 Weekly Media Express
Design & Developed by Smart Framework