নিষেধাজ্ঞা থাকলেও যাত্রীবাহী বাসে সোর্স দিয়েই তল্লাশি করায় পুলিশ। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে এমনই অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। যানবাহন থামিয়ে সোর্স দিয়েই তল্লাশি করা হয়। সাধারণ যাত্রীদের অভিযোগ, ব্যাগ চেকিংয়ের নামে বিভিন্ন সময় হেনস্তা করা হচ্ছে তাদের। সম্প্রতি সময় সংবাদের সরেজমিন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
বিভিন্ন সড়কে সোর্স দিয়ে তল্লাশির এ বিষয়টি নিয়ে সময় সংবাদকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক তাওহিদুল হক জানান জানান, সোর্স দিয়ে তল্লাশি এমনকি সঙ্গে রেখে অভিযান পরিচালনাও বেআইনি।
কুমিল্লার চান্দিনা থানাধীন কাঠেরপুল এলাকাতে সময় সংবাদের প্রতিবেদক ও চিত্রগ্রাহক উঠেন একটি বাসে-কিছুদূর যেতেই দেখতে পান; দুটো বাসকে দাঁড় করিয়ে সোর্সের মাধ্যমে বাসে তল্লাশি করছেন পুলিশ সদস্যরা।
সময় সংবাদের টিম বাস থেকে নামতেই আটকে রাখা বাসগুলো ছেড়ে দিয়ে নিজেরা সরে যেতে উদ্যত হয় চান্দিনা থানা পুলিশ।
এদিকে মাসখানেক আগে চান্দিনা থানা পুলিশের এক সোর্স তল্লাশি নিচ্ছে বাসে এ ধরনের একটি ভিডিও প্রতিবেদকের কাছে থাকায় সহজেই চিনতে পারেন তাকে। কাজেই চান্দিনা থানা পুলিশের গাড়ির সামনে গিয়ে এবার জানতে চান তার পরিচয়। জবাব চাওয়া হয় বেআইনি হওয়া সত্ত্বেও কেন তল্লাশি চালানো হচ্ছে সোর্সকে দিয়ে। এ সময় সোর্সকে গাড়িতে নিয়েই চলে যান ওই পুলিশ সদস্যরা। কিছুদূর গিয়ে গাড়ি থামলে পালিয়ে যান ওই সোর্স।
মাসখানেক আগের ঘটনা ছিল এটি। দাউদকান্দি টোল প্লাজার পরে দাউদকান্দি থানা পুলিশ সোর্সকে দিয়ে বাসে তল্লাশি করতে দেখা যায়। পরিচয় জানতে চাইলে প্রথমে কমিউনিটি পুলিশের সদস্য বলে পরিচয় দেয়। তার আইডি কার্ড দেখতে চাইলে নেমে যায় বাস থেকে। ওই সময় কুমিল্লা জেলার পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নানকে ফোন দিয়ে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কী আইনে আছে আর নাই সেটা আমরাও জানি আপনারাও জানেন। ঠিক আছে; দেখছি আমি।
একই ঘটনা দেখা যায় গত বৃহস্পতিবারও (১৪ সেপ্টেম্বর)। সোর্স পরিচয়ে দুই ব্যক্তি বাসে তল্লাশি চালানোর সময় হাজির হয় সময় সংবাদ। একজন পালিয়ে গেলেও আরেকজনকে আটকে ফেলেন যাত্রীরা। পরে পুলিশকে খবর দিলে দাউদকান্দি থানা পুলিশ এসে আটক করেন তাকে।
সাধারণ বাসযাত্রীদের অভিযোগ সারা দেশে অহরহই ঘটছে এ ধরনের ঘটনা।
বাসের যাত্রীরা বলেন, আমরা সাধারণ খেটে খাওয়া কৃষাণ মানুষ। এ পথে যাওয়া আসাতে বেশিরভাগ সময় তারা আমাদের ব্যাগে ও শরীরে হাত দিয়ে তল্লাশি করে থাকেন। অনেক সময় ব্যাগে অন্য কিছু ঢুকিয়ে দিয়েও তল্লাশি করেন। আমরা যে দুই চার টাকা রোজগার করি, সেগুলোও তারা ছিনতাই করে নিয়ে যায়। পুলিশসহ ভাগ করে নেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক তাওহিদুল হক জানান, সোর্সকে সাথে নিয়ে অভিযান পরিচালনা এবং সোর্সের দ্বারা তল্লাশি চালানো পুরোপুরি বেআইনি। এটি আইন বর্হিভূত কাজ, পুলিশ এটা কোনোভাবেই করতে পারে না। পুলিশও তল্লাশি করতে গেলে তাদের কিছু আইনি প্রক্রিয়ায় বা নিয়ম মানার কথা বলা আছে।
পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইনামুল হক সাগর জানান, নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে তাদের; তবে এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকবে পুলিশ।
ইনামুল হক সাগর সময় সংবাদকে আরও বলেন, তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দিষ্ট আইন রয়েছে এবং কোনো ধরনের ব্যত্যয় ঘটলে অবশ্যই প্রযোজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আর সাধারণ যাত্রীরা জানান, আইনের সীমা মেনে কাজ করবে পুলিশ এমনটি প্রত্যাশা তাদের।