দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে চট্টগ্রাম-৮ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন চট্টগ্রামের নারীনেত্রী ও সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের সমন্বয়ক এডভোকেট জিনাত সোহানা চৌধুরী। চট্টগ্রাম তো বটেই, সারাদেশে তরুণ প্রজন্মের কাছে একটি অতিপরিচিত নাম। যিনি করোনার ভরা যৌবনে তার চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে সম্মুখ সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন করোনাযুদ্ধে।
দিনরাত করোনা রোগীদের পাশে থেকে পরম মমতায় তাদের সুস্থ করেছেন। তাহের নাহার ফাউন্ডেশনের হয়ে ৩৫০টিরও অধিক সেমি পাকা গৃহনির্মাণ করে দিয়েছেন সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে। এডভোকেট জিনাত সোহানা চৌধুরী বাংলাদেশের প্রথম নারী যিনি চট্টগ্রামের শতাধিক মাদ্রাসায় গিয়ে হাজারো শিক্ষার্থীর সমবেত কন্ঠে জাতীয় সংগীত, জয় বাংলা স্লোগান ধ্বনিত করে দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের শুনিয়েছেন মহান মুক্তিযুদ্ধের গল্প। তাদের শপথ করিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ধারণ করে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার।
মনোবল থাকলে দেশের জন্য কাজ করতে নারীত্ব যে কোনো বাধা নয় তা তিনি দেখিয়ে দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত। দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে চারদিক থেকে এসেছে শত বাধা, এসেছে প্রাণনাশের হুমকিও। তবুও তিনি দমে যাননি। বরং এগিয়ে গেছেন দ্বিগুণ উৎসাহে। তরুণ সংগঠক, রাজনীতিক ও আইনজীবী জিনাত সোহানা চৌধুরী এভাবে অনেকের কাছেই ‘আইকন’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন মাদরাসায় অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
ধারাবাহিক কর্মসূচির কারণে সাধারণ মানুষের কাছে ‘অদম্য ও সাহসী সোহানা’ নামে পরিচিতি পান তিনি। কারো বাঁধা তাকে দমাতে পারেনি। অনেকেই ভেবেছিলেন প্রতিরোধের মুখে পিছিয়ে যাবেন সোহানা। কিন্তু না, সোহানা আরও উজ্জ্বল হন তার কাজের মাধ্যমে।ব্যতিক্রমী কর্মসূচি শুরুর সময় তার অনেক সহযোদ্ধা পেছন থেকে সটকে পড়েছেন, কিন্তু তিনি ছিলেন সিদ্ধান্তে অটল। এগিয়ে যেতে থাকেন দৃঢ়পদে, অভিষ্ঠ লক্ষ্যে। যার স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের হাত থেকে সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন সোহানা।
কেন নিজেকে এই কর্মসূচীতে যুক্ত হলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে জিনাত সোহানা বলেন, "দেশের প্রধামন্ত্রী ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে ঘোষণা দেন দেশ থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূল করার। একজন নারী হিসেবে দেশকে জঙ্গিবাদমুক্ত করার ঘোষণা আমাকে ভীষণ অনুপ্রাণিত করেছে। প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগের সারথী হতে 'সুচিন্ত বাংলাদেশ'-এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এ আরাফাতের নির্দেশনায় নিরন্তর কাজ করে চলেছি।"
'সুচিন্তা বাংলাদেশ' চট্টগ্রাম বিভাগের সমন্বয়কারী জিনাত সোহানা আরও বলেন, 'শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে নৈতিক শিক্ষার সুতিকাগার। শিক্ষার্থীরা যেন নিরাপদে বাসায় ফিরতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো শিক্ষার্থী যেন যৌন হয়রানির শিকার না হয়, তা নিয়ে সকলকে কাজ করতে হবে।' ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি বলৎকারের শাস্তিও যেন মৃত্যুদণ্ড করা হয়, সেই দাবি জানান এই নারী নেত্রী।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও নৌকার পক্ষে ছিলো তার নানা রকম উদ্যোগ। চট্টগ্রাম বিভাগজুড়ে নৌকার প্রার্থীদের সমর্থনে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভিজুয়্যালি বিএনপি-জামায়াতের ১০০ দিনের হরতালের বর্বরতার চিত্র এবং বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘু নির্যাতনের চিত্র এবং দিন বদলের উন্নয়নের চিত্র, প্রতিটি মানুষের কাছে তুলে ধরেন। নৌকার পক্ষে জনমত সৃষ্টিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে তার এসব উদ্যোগ। ফলে আওয়ামী লীগের গ্রামগঞ্জ, শহর ও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছে অত্যন্ত প্রিয় মুখ হয়ে ওঠেন অ্যাডভোকেট জিনাত সোহানা চৌধুরী।
জিনাত সোহানা চৌধুরী বলেন, আমি চট্টগ্রাম-৮ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম নিয়ে জমা দিয়েছি । আমি রাজপথের একজন কর্মী হিসেবে সব সময় আওয়ামীলীগের জন্য কাজ করেছি। যে কোন দুর্যোগে সব সময় পাশে ছিলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন দিলে চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী -চান্দগাঁও-বায়োজিদ) আসনের মানুষের সেবা করার জন্য সুযোগ করে দিবেন। আমি যদি নির্বাচিত হই তাহলে শুধু চট্টগ্রাম নয় পুরো বাংলাদেশে কাজ করতে পারবো সে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা আমার আছে।
উল্লেখ্য, এডভোকেট জিনাত সোহানা চৌধুরী সুচিন্তা ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিভাগের সমন্বয়ক, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সদস্য,চট্টগ্রাম চেম্বার অফ কমার্স ও উইমেন্স চেম্বার এন্ড কমার্সের সদস্যের পাশাপাশি ফারমিন গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবে পোশাক পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সদস্য হিসেবে কাজ করছেন।
অন্যদিকে জিনাত সোহানা চৌধুরীর স্বামী মোহাম্মদ ইমরানও চট্টগ্রাম-৮ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন কিনেছেন। ইমরান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা স্টেট আওয়ামী লীগের সভাপতি। এর আগে দীর্ঘ সময় তিনি সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।