দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির নেতৃত্বে নতুন জোট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে ‘যুক্তফ্রন্ট’। এ জোটে রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি।
বুধবার (২২ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান ও যুক্তফ্রন্টের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম এ জোটের ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির মহাসচিব জাফর আহমেদ জয়, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের চেয়ারম্যান শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী প্রমুখ।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বুধবার (২২ নভেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন একটি জোটের আত্মপ্রকাশ হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির নেতৃত্বাধীন জোট ‘যুক্তফ্রন্ট’র উদ্যোগে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে আয়োজন করা হয়েছে। এতে নতুন জোটের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইবরাহিম উপস্থিত থাকবেন।
নতুন জোটের বিষয়ে গণমাধ্যমকে সৈয়দ ইবরাহিম বলেছিলেন, বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে নতুন এই জোট গঠন হচ্ছে।
এদিকে গণঅধিকার পরিষদ ও জাগপা নতুন এ নির্বাচনী জোটে যাওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে। গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, হালুয়া-রুটির আসন ভাগাভাগিতে আমরা নেই। আমরা এই সরকারের অধীনে পাতানো নির্বাচনে যাব না। একই কথা বলেছেন জাগপার সভানেত্রী ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান।
গত ৩০ ডিসেম্বর থেকে ১০ দফার ভিত্তিতে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে বিএনপি। এরপর গত ১২ জুলাই থেকে সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে আন্দোলনে নামে দলটি। ৪২টির মতো দল যুগপৎ আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপিসহ ৮টি নিবন্ধিত দল রয়েছে। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় করেই ভোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে যুগপতের শরিকদের। তবে বেশ কিছুদিন ধরে যুগপতের নিবন্ধিত একাধিক দল বিএনপিকে ছেড়ে নির্বাচনে যেতে পারে বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর গুঞ্জন শুরু হয়। এতে নিবন্ধিত দলগুলো নিয়ে যুগপৎ জোটে সন্দেহ-অবিশ্বাস বাড়তে থাকে। এমন প্রেক্ষাপটে সরকারি চাপ ও এমপিত্বের প্রলোভনে পা না দিতে বিএনপির পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় যুগপৎ শরিকদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনে বিজয়ী হলে ‘জাতীয় সরকার’-এ শরিকদের যোগ্যতা অনুযায়ী যথাযথ মূল্যায়নেরও আশ্বাস দেওয়া হয়। একই সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকদের পরিণতি ভালো হয় না বলেও সতর্ক করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যাওয়ার গুঞ্জনই সত্যি হতে যাচ্ছে। আর এর মধ্য দিয়ে যুগপৎ জোটে ভাঙনও দৃশ্যমান হতে যাচ্ছে।
নতুন নির্বাচনী জোট যুক্তফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান কালবেলাকে বলেন, সরকারবিরোধী চলমান আন্দোলন নস্যাৎ করতে এবং নানা চাপ ও প্রলোভনে শরিকদের নির্বাচনে নিতে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করা হচ্ছে। সুতরাং যুগপতের শরিকরা নিজেরা স্বেচ্ছায় নতুন জোট করতেছে, না তাদের দিয়ে করানো হচ্ছে, সেটাও আলোচনার বিষয়। তবে দেশের মানুষ যারা রাজনীতি বোঝেন কিংবা বোঝেন না, তারা সবাই জানেন, নির্বাচন সামনে রেখে এখন কী ঘটনা ঘটছে, কেন ঘটছে। এটাতে আমাদের ভাবমূর্তি যদি দুই আনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সরকারের অবশিষ্ট ভাবমূর্তি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ছাড়া জেনারেল ইবরাহিম জোট ত্যাগ করে কার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে জোট ছাড়বেন। কারণ, উনি তো নিজেই ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র। কাজেই এখানে কোনো যুক্তি নেই, অন্য কোনো বিষয় আছে, আর সেটা সবাই বোঝে।
তিনি আরও বলেন, যে নির্বাচনে যাওয়ার আলোচনা হচ্ছে, সে নির্বাচন যে হবে, বা হবে না, সেটার শতভাগ গ্যারান্টিই বা কে দিচ্ছে? আমাদের দেশে তপশিল ঘোষণা করে তা আবার স্থগিত করার দৃষ্টান্ত তো রয়েছে। তপশিল ঘোষণা করে সেটা পরিবর্তন করারও উদাহরণ আছে।
মন্তব্য করুন