২৮ অক্টোবর রাজধানীতে বিএনপির মহাসমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কৌশলে ঢাকায় আসছেন নেতাকর্মীরা। খবর- ঢাকা টাইমস
এদের বেশিরভাগের বিরুদ্ধে মামলা থাকায় পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে নানান পন্থা অবলম্বন করে ইতোমধ্যেই পৌঁছতে শুরু করেছেন রাজধানীতে। এমন অন্তত ১৫ জন নেতার সঙ্গে ঢাকায় কথা হয়েছে ঢাকা টাইমসের।
এসব নেতাকর্মী ঢাকা টাইমসকে বলেছেন, পুলিশের গ্রেপ্তার ও ক্ষমতাসীন নেতাকর্মীদের চোখ এড়িয়ে আমরা ঢাকায় এসেছি। বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা সরাসরি ঢাকায় আসা গাড়িতে না উঠে ভেঙে ভেঙে ভিন্ন পথ ধরে ঢাকায় পৌঁছাচ্ছেন।
ঢাকা টাইমসের সঙ্গে যে ১৫ জন নেতাকর্মীর কথা হয়েছে- তাদের ৭ জন খুলনার, ৪ জন রাজশাহীর ও ২ জন বগুড়ার এবং অন্য দুজন বরিশাল থেকে এসেছেন।
একাধিক সূত্র বলছে, বিএনপি নেতাকর্মীদের ঢাকায় আসার যে নির্দেশনা দিয়েছে, এর মধ্যে যাত্রাপথের কৌশলও স্পষ্ট করা হয়েছে। যে কৌশল অবলম্বন করে এসব নেতাকর্মী ঢাকায় এসেছেন। অন্যরাও একই পন্থায় ঢাকায় আসছেন। তবে বিভিন্ন জেলার গুরুত্বপূর্ণ নেতাকর্মীর বেশিরভাগ ইতোমধ্যেই পৌঁছে গেছেন রাজধানীতে। সূত্র বলছে, আজ ও কাল অন্যরাও পৌঁছে যাবেন ঢাকায়।
খুলনা থেকে ঢাকায় আসা বিএনপি নেতাকর্মীরা ঢাকা টাইমসকে জানান, প্রতিবার ঢাকায় কর্মসূচিতে আসার সময় যানবাহন বন্ধ থাকে। পথে পথে তল্লাশিসহ নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন তারা। সে কারণে এবার তারা মহাসমাবেশের আগেই ঢাকায় এসেছেন।
এছাড়া বাস বা কোনো যানবাহন রিজার্ভ করে একসঙ্গে তারা ঢাকায় আসছেন না। নেতাকর্মীরা বলছেন, আবাসিক হোটেলে থাকলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আটক করতে পারে- এই বিষয়টি চিন্তা করে তারা বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে উঠছেন।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, খুলনা জেলার ৯টি উপজেলা থেকে প্রায় ৪ হাজার নেতাকর্মী মহাসমাবেশে যোগ দেবেন। মঙ্গলবার থেকে নেতাকর্মীরা যে যার মতো বাসে- ট্রেনে করে ঢাকায় এসেছেন। কোনো বাস ভাড়া করে নেতাকর্মীরা একসঙ্গে ঢাকায় যাতে না আসে সে বিষয়ে আগেই কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা রয়েছে বলেও জানান তারা।
তুহিন নামে একজন বিএনপি নেতা জানান, নেতাকর্মীরা নিজ নিজ উদ্যোগে ও নিজস্ব খরচে সমাবেশে যোগ দিতে এসেছেন। অনেক নেতাকর্মী ঢাকায় পৌঁছে গেছেন।
আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতসহ ৪০টি দলের সমাবেশ ঘিরে রাজধানীতে কী হবে ২৮ অক্টোবর- সে দিকেই এখন চোখ সবার। এদিন রাজধানীতে মাত্র সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরত্বে সমাবেশ ডেকেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি, জামায়াত। এছাড়া এদিন সমাবেশ করবে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ৩৭ দলও।
আগামী ২৮ অক্টোবর সমাবেশের মধ্য দিয়ে দলগুলো রাজপথে নিজেদের শক্তির জানান দিতে চায়। সব দলই সেদিন সর্বোচ্চ সংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে দফায় দফায় বৈঠক করছে। নেতাকর্মীদের দিচ্ছে নানা নির্দেশনা। এ কর্মসূচি নিয়ে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে, জনমনেও দেখা দিয়েছে নানা শঙ্কা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলো একই দিনে কাছাকাছি স্থানে কর্মসূচি পালন করলে সংঘাত সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। এমন পরিস্থিতি এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকতে হবে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোকেও সহনশীলতা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে হবে। এ অবস্থায় যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ কঠোর পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছে।
২৮ অক্টোবর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটের সামনে সমাবেশ করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ওইদিন বড় শোডাউন করবে দলটি। পাশাপাশি প্রতিটি থানা-ওয়ার্ডে সতর্ক অবস্থানে থাকবে। এর বাইরে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হবে সতর্ক পাহারা। প্রতিটি পাড়া-মহল্লার মোড়ে এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়কে শামিয়ানা টানিয়ে সকাল থেকে অবস্থান করবেন আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এর সঙ্গে দলীয় সংসদ-সদস্য ও কাউন্সিলরাও তাদের অনুসারীদের নিয়ে মাঠে অবস্থান নেবেন।
অন্যদিকে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করবে বিএনপি। সমাবেশে বড় ধরনের জমায়েতের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। এজন্য সারা দেশের নেতাকর্মীদের তিন দিন আগেই ঢাকায় আসতে বলা হয়েছে। তবে সতর্ক থেকে শান্তিপূর্ণভাবে এ কর্মসূচি সফল করার জন্য সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন শুরু হয়। এ আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে রয়েছে ৬-দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২-দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, লেবার পার্টিসহ ৩৬টি দল। চলমান আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সোমবার গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বৈঠকও করেছে বিএনপি।
শরিক দলগুলোর দায়িত্বশীল নেতারা মনে করেন, সরকারের বিরুদ্ধে অনেক মানুষ মানসিকভাবে একাট্টা। কিন্তু এখন পর্যন্ত সব বিরোধী দল একাট্টা হয়ে মাঠে নামেনি। সরকারের বাইরে থাকা ইসলামি, বাম ও অন্যান্য গণতান্ত্রিক দলকে যুগপৎ বা ভিন্নভাবে সমন্বয় করে রাজপথে নামানো যায়নি। কিছুটা ঘাটতি রয়ে গেছে সব শ্রেণি–পেশার মানুষকে আন্দোলনে নামানোর ক্ষেত্র। বিশেষ করে ছাত্র, যুবক, শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষকে মাঠে নামানোর ক্ষেত্রে এখনো ঘাটতি আছে। যদিও সম্প্রতি ছাত্র, যুব, শ্রমিক ও পেশাজীবীদের চারটি পৃথক সম্মেলনের পর এই ঘাটতি অনেকটা কেটেছে বলে মনে করছেন নেতাদের কেউ কেউ। তারা মনে করেন, বিচ্ছিন্ন দু-একটি ঘটনা ছাড়া এখন পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলন-কর্মসূচি ঠিক পথেই আছে।
মন্তব্য করুন